ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD) বা দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ একটি নীরব ঘাতক। এটি ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস করে এবং যদি সময়মতো চিকিৎসা না নেওয়া হয়, তবে শেষ পর্যন্ত কিডনি সম্পূর্ণরূপে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। তাই এর ধাপগুলো জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
স্টেজ ১: কিডনি ফাংশন স্বাভাবিক, কিন্তু ক্ষতির প্রমাণ আছে
GFR (Glomerular Filtration Rate): 90 বা তার বেশি
কিডনি এখনও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে, তবে ইউরিন টেস্ট বা স্ক্যানের মাধ্যমে কিছু সমস্যা ধরা পড়তে পারে।
লক্ষণ: সাধারণত কোনো উপসর্গ থাকে না।
পরামর্শ: স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা।
স্টেজ ২: হালকা কিডনি ক্ষতি
GFR: 60-89
কিডনির কার্যক্ষমতা কিছুটা কমেছে।
লক্ষণ: অনেক সময় লক্ষণ প্রকাশ পায় না।
পরামর্শ: রক্তচাপ ও ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা, নিয়মিত কিডনি চেকআপ।
স্টেজ ৩: মাঝারি কিডনি ক্ষতি (দুই ভাগে বিভক্ত)
স্টেজ ৩ A GFR: 45-59
স্টেজ ৩ B GFR: 30-44
কিডনির কার্যক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে শুরু করে।
লক্ষণ: ক্লান্তি, পা ফুলে যাওয়া, ইউরিনে ফেনা, ঘুমের সমস্যা ইত্যাদি।
পরামর্শ: নেফ্রোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও ওষুধ গ্রহণ গুরুত্বপূর্ণ।
স্টেজ ৪: গুরুতর কিডনি ক্ষতি
GFR: 15-29
কিডনি এখন গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, আর Dialysis বা কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে হয়।
লক্ষণ: বমি বমি ভাব, ক্ষুধামান্দ্য, শ্বাসকষ্ট, চামড়ার চুলকানি, রক্তাল্পতা।
পরামর্শ: বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণে থাকতে হবে। খাদ্য তালিকায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন।
স্টেজ ৫: কিডনি ব্যর্থতা (End Stage Renal Disease - ESRD)
GFR: 15-এর নিচে
কিডনি সম্পূর্ণরূপে কাজ করা বন্ধ করে দেয়।
লক্ষণ: তীব্র ক্লান্তি, বমি, বিভ্রান্তি, হৃদযন্ত্রের সমস্যা।
চিকিৎসা: Dialysis শুরু করতে হয় বা কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়।
কিডনি সুস্থ রাখতে করণীয়:
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন
- রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন
- অতিরিক্ত ওষুধ বা স্টেরয়েড থেকে দূরে থাকুন
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন
ক্রনিক কিডনি ডিজিজের প্রতিটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাথমিক পর্যায়ে এটি শনাক্ত করা গেলে জীবন রক্ষা করা সম্ভব। সময়মতো চিকিৎসা, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা CKD মোকাবেলায় সবচেয়ে বড় অস্ত্র।
0 Comments